আকতারুজ্জামান মোহাম্মদ মোহসীন
নতুন করে কপাল খুললো বন বিভাগ আর কৃষি বিভাগের । আগের ঘুষের সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে মানুষের নিজের গাছ কাটতে আমলাতন্ত্রের অনুমতি আর চাল আটা বিক্রি করতে আমলার লাইসেন্স । নতুন করে আমলাতন্ত্রের তালিকা বৃদ্ধি হলো । বৃদ্ধি হলো নতুন বিড়ম্বনার । অজুহাত যাই হোক আমলার আখের বেশ
ভাল । কারন আপনাকে তার সেবা নিতে ঘুষ দিতে বাধ্য । বাংলাদেশের মানুষ আমলাতন্ত্রের কাছ থেকে কবে সহজে সেবা পেয়েছে ? বাংলাদেশের যে কোন সরকারী প্রতিষ্ঠান মানে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার আখড়া । কোন অফিস কার চেয়ে কত জটিলতা তৈরি করতে পারে তার প্রতিযোগিতা চলছে ।
আমলাতন্ত্রের যন্ত্রণায় মানুষের নাভিশ্বাস । আর এই জতিলতাকে সম্বল করে অনেক লাইন ম্যান, পিয়ন, বিলিং ক্লার্ক পর্যন্ত রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাচ্ছে । দুর্নীতি দমন ব্যুরো তাদের সম্পদে অবাক হচ্ছে । মানুষ মুখে বলছে আমলাতন্ত্রের জটিলতা কমানোর কথা, অথচ সরকার মানুষের উপর আমলাতন্ত্র চাপিয়ে দিয়েই চলেছে । নতুন করে শুরু হবে নিজের গাছ কাটা আর চাল আটার দোকানের লাইসেন্স বিড়ম্বনা । আমলাতন্ত্রের বিড়ম্বনা কেমন তা এই দেশে কে না জানেন ? বাংলাদেশে যে কোন কাগজের বিড়ম্বনা সম্পর্কে আমাদের সবার ভাল করে জানা আছে ।
একটা টীকা দেবেন ফ্রীতে, সেখানে একটা টীকার কার্ড ডাউনলোড করতে হবে, নয়ত টীকা দিতে পারবেন না । আশা করি কেউ ঐ টীকা কার্ড বিনা মুল্যে পাওয়া সম্ভব নয় । বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের টীকা দিতে সরকার যা ব্যয় করছেন মানুষের ঐ টীকা কার্ড উঠাতে কত ব্যয় হবে কেউ কি তা বিবেচনা করেছেন ? যদি ২০ টাকা হিসাব করেন তবে ৩৪০,০০,০০,০০০.০০ টাকা, বুস্টার ডোজ দিতে আরও ৩৪০,০০,০০,০০০.০০ টাকা। আপনাকে কার্ড দেখিয়ে হোটেল, মার্কেটে যাওয়ার জন্য কার্ড বানাতে কত টাকা খরচ হচ্ছে তা কি কেউ অনুমান করছেন ? এখানেও কয়েক কোটি টাকা যাচ্ছে । মূলতঃ মানুষ কোন খাতে কত টাকা খরচ করছে তাতে কার কি আসে যায় ? সরকারী আমলারা কেবল আদেশ জারি করেই আমলাতন্ত্রের জাল ফেলেই খালাস । এবার মানুষ ভাই বললে নির্যাতন পাবে, স্যার বলতে হবে আবার ঘুষও দিতে হবে ।
আমাদের দেশের সব মানুষ কম বেশি অভিজ্ঞ যে, আমাদের দেশের একটা বাচ্চা জম্ম নেয়ার পর তার জম্ম নিবন্ধন নিতে নাকি মায়েদের ধারনা - সন্তান জম্ম দিতে যত বিড়ম্বনা আর কষ্ট না পেয়েছে, জম্ম সনদ নিতে আর চেয়ে বেশি বিড়ম্বনা আর কষ্ট পায় সাথে অর্থ ব্যয় । আছে ভোটার আইডি করতে গেলে বুঝবেন কি অবস্থা । আবার ব্যবসা করে সরকারকে ভ্যাট, ট্যাক্স দিতে ট্রেড লাইসেন্স করবেন, দয়া করে একবার সিটি কর্পোরেশন অফিসে গিয়ে দেখেন আমলাতন্ত্রের কি অবস্থা । দেশের স্বার্থে ফায়ার লাইসেন্স করবেন - যে করেছেন সে জানেন আহা আমলাতন্ত্রে কি কষ্ট । হালাল সনদ নেবেন বুঝতে পারবেন আমাদের ইসলামিক ফাউডেশন আর আমাদের ইসলামিক আলেমবৃন্দ কত পবিত্র । আশা করি বিএসটিআই সনদ নেয়ার আমলাতন্ত্রের যন্ত্রণা বলার প্রয়োজন নেই । এমনি করে প্যাটেন্ট ডিজাইন, ট্রেড মার্ক রেজিস্ট্রেশন, পাসপোর্ট, জমি সংক্রান্ত নথিপত্র, নাম সংশোধন, ভ্যাট দেবেন, ট্যাক্স দেবেন ? যারা দিয়ে থাকেন তাঁরা জানে আমলাতন্ত্র কাকে বলে ? ইত্যাদি আরও যত কাজ আছে তার শিকার যে হয়েছেন তাঁরা জানেন আমলাদের কাছ থেকে সনদ আর অনুমতি নিতে কত ধানে কত চাল ?
এখন নতুন করে যোগ হয়েছে মানুষের নিজের গাছ কাটতে আমলার অনুমতি আর চাল ডাল বিক্রি করতে আমলার লাইসেন্স । দেশের কোন মানুষ বিশ্বাস করে যে কর্তৃপক্ষের কাছে গেলেই তিনি আমার গাছটা কাটার অনুমতি দেবেন ? প্রথমে কথা হবে গাছটা অনেক দাবী, কিছু বখশীস করে যান । তারপর হয়ত নির্ধারিত হয়ে যাবে কোন গাছ কাটতে কত টাকা দিতে হবে । এতদিন ট্রেড লাইসেন্স বিড়ম্বনা দিয়ে চাল আটা বিক্রি করতে পারতো, এখন তার জন্য আলাদা লাইসেন্স লাগবে । নতুন একটা ফাঁড়া যোগ হয়েছে । শুনছি বাসায় বসে চ্যানেল টিভি দেখবেন তার জন্য সেটটফ বক্স লাগবে । নিজের দেশে উৎপাদন করে লাগালে না হয় হতো, তা আবার কোন ব্যবসায়ীকে সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে বিদেশ থেকে আমদানী করে আমাদের লাগাতে হবে ।
নিজের চারিদিকে তাকিয়ে দেখি আমাকে চারিদিক থেকে আমলাতন্ত্র জালের মত বেষ্টন করে রেখেছে । আমি আমলাতন্ত্র ছাড়া কোন দিকে যেতে পারছি না । অথচ আমি যেখানে যাই সেবার জন্য আমাকে ঘুষ দিতে হয় । আমলাতন্ত্র থাকে সরকারী প্রতিষ্ঠানে, আমলারা থেকে সেখানে । অথচ আমরা বিড়ম্বনায় পরি সেখানে । কারও কাছে অভিযোগ জানানোর সুযোগ নেই । পুলিশ যেমন মামলা নেয় না, অভিযোগেরও তেমন কোন জায়গা নেই । ক’দিন পর একটা আইন করা যায় কিনা দেখুন যে, দেশের মানুষ আর তাদের সম্পদ আমাদের দেশের আমলাতন্ত্রের কাছে জমা থাকবে । আহা, দেশের উন্নতির সাথে সাথে মানুষ বুঝি আমলাতন্ত্রের হাতে বন্ধী হতে থাকবে ?
লেখক : সাহিত্যিক ও সমসাময়িক বিষয় লেখক