দ্বীপের শ্রেষ্ঠ সন্তান : আছাদুল হক চৌধুরী সাহেব মিয়া ছিলেন সন্দ্বীপের কিংবদন্তি জননেতা
বিপন্ন মানবতা মাড়িয়ে উদ্ধারে সিদ্ধহস্ত একজন মানবিক যোদ্ধা। জীবন যৌবন মাড়িয়ে মা মাটি ও মানুষের সেবায় জীবন উৎসর্গকারী মানবিক যোদ্ধার জীবন বৃত্তান্ত লেখার দুঃসাহস দেখালাম আগামীর প্রজন্মের জন্য।
ক্ষনস্থায়ী পৃথিবীতে কেউ চিরস্থায়ী নয়, প্রজম্নের পর প্রজম্ম আসবে ধুলির ধরায় ধুসর হয়ে। তাদের জন্য রচিত হউক আমাদের মহামানবদের জীবন কাহিনী।
সন্দ্বীপের কাটগড়ের চৌধুরী পরিবার।
অর্থ বিত্ত যশ খ্যাতি সবই মাথায়
নিয়ে জম্ম গ্রহণ করেন দ্বীপের বরপুত্র আছাদুল হক চৌধুরী সাহেব মিয়া।
১৯২৮ সালে অনারারি ম্যাজিট্রেট ও সন্দ্বীপের প্রথম কো অপারেটিভ ব্যাংক প্রতিষ্ঠাতা জ্বনাব আবুল হোসেন মিয়া চৌধুরী ও চেমন আফরোজ চৌধুরী দম্পতির একমাত্র পুত্র সন্তান আছাদুল হক চৌধুরী সাহেব মিয়া।
বাল্যকাল থেকে তার মেধা চৌকস ও বুদ্ধিদীপ্ত আচরণে বিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে উচ্চ শিক্ষা না নিয়ে জড়িয়ে গেলেন মানব সেবায়!মাত্র আঠার বছর বয়সে নির্বাচিত হলেন কাটগড়ের প্রেসিডেন্ট।
১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত ছিলেন কাটগড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান! ১৯৭৭ সালে কাটগড় ইউনিয়ন নদী সিকিস্তি হলে তিনি চলে আসেন কালাপানিয়া ইউনিয়নে।
১৯৭৮ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনি কালাপানিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।১৯৭৮ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত তিনি অত্র ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন।
১৯৮৬ সালে প্রথম উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন!১৯৮৯ সালে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদত্যাগ করলে তিনি ভারপ্রাপ্ত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনোনীত হন।
১৯৯০ সালে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেলে তিনি স্ব-পদে ফিরে আসেন।
১৯৭৩ সালে তিনি পাখি শিকারে লঞ্চ নিয়ে নদী বিহারে বের হলে উড়িরচর আবিষ্কার করেন। নিজের অর্থ সম্পদ অকাতরে ব্যায় করে একক প্রচেষ্টায় উড়িরচরকে সন্দ্বীপের সাথে একীভূত করে একজন নিঃস্বার্থ সন্দ্বীপ প্রেমি নেতা হিসেবে আবিভূত হন।
সাহেব মিয়ার জীবনের ব্রতী ছিলো অসহায় নিপীড়িত ও গরীব মানুষের পাশে দাড়ানো! কখনো জীবনে লাভ ক্ষতির হিসেব তিনি করেননি। যেখানে সন্দ্বীপের নদী সিকিস্তি মানুষ দেখেছেন, তাদেরকে তিনি ভিটে বাড়ির ব্যাবস্থা করেন।
হাটহাজারীর ফাতেয়াবাদ সন্দ্বীপ কলোনি তিনি জীবনবাজি রেখে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সাথে লড়াই করে সৃষ্টি করেন। তাছাড়া চন্দ্রঘোনা, ফটিকছড়ি, বোয়ালখালীতে তিনি সন্দ্বীপের নদী সিকিস্তি মানুষদেরকে ভিটে বাড়ির ব্যাবস্থা করেন।
জাতীয় রাজনীতিতে তিনি একজন দক্ষ সংগঠক।
তার রাজনীতির উদ্দেশ্য ছিল মানুষের সেবা করা!তাই তিনি ক্ষমতাসীন দলের কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করতেন! ১৯৭৭ সালে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সন্দ্বীপের সভাপতি নির্বাচিত হন।
১৯৮২ সালে প্রেসিডেন্ট এরশাদ সরকার রাস্ট্র ক্ষমতায় আসলে তিনি সন্দ্বীপের জাতীয় পাটির সভাপতি নির্বাচিত হন।
আছাদুল হক চৌধুরী সাহেব মিয়া আমৃত্যু সন্দ্বীপের সমস্যা মাথায় নিয়ে চলাচল করতেন। তার জীবদ্দশায় সন্দ্বীপের উন্নয়ন ও বেকার যুবকের চাকরির ব্যাবস্থা করেন।
আছাদুল হক চৌধুরী সাহেব মিয়া জীবন সাজাতে বিয়ে করেন সন্তোষপুরের জমিদার সামসু মিয়ার তনয়া তাহমিনা হক চৌধুরীকে।
ওনার চার সন্তান। একমাত্র পুত্র সদ্য বিদায়ী কালাপানিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল হক চৌধুরী বায়রন।
ওনার সহধর্মিণী মহীয়সী তাহমিনা হক চৌধুরী ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম মহিলা চেয়ারম্যান ও দীর্ঘ বিশ বছর কাল উড়িরচর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান।
জ্বনাব আছাদুল হক চৌধুরী সাহেব মিয়া ২০০০ সালে ৭৩ বছর বয়সে মহান প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে ইহজাগতিক জীবন ত্যাগ করেন! এমন মানবিক সন্দ্বীপ প্রেমি নেতা হারিয়ে দ্বীপ বাসী শোকার্ত।
ওনার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
# এস এম জাকিরুল আলম মেহেদী