যে কথা বলা হয়নি : পর্ব-৩

সংবাদ শিরোনাম

পূর্ব প্রকাশের পর (ধারাবাহিক পর্ব-৩)

যে কথা বলা হয়নি : পর্ব-৩

Sonali News ১০:৩৪ এএম, ২০২০-০৭-২৭ 871

যে কথা বলা হয়নি : পর্ব-৩

আলম সাহেবের স্ত্রী সবুরকে (কেয়ারটেকার) কিছু প্রয়োজনীয় ওষুধ ও স্যালাইন আনতে বলায় সন্দেহ এবার প্রকট হলো । কেমন যেন একটা সুনসান নীরবতা ভাবিয়ে তুললো, আলম সাহেবকে নিজের স্বস্তি ফেরাবার জন্য প্রতিদিনের মতো গল্প করার জন্য ছাদে যেয়েও ফিরে আসতে হয়েছে । সকলে প্রায় নিশ্চিত করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে আলম সাহেব সংক্রামিত। পূর্ব থেকেই বাড়িওয়ালার স্ত্রী "মায়াবী" ভাড়াটিয়াদের ছাদে যেয়ে গল্প করাটা পছন্দ করত না । আলম সাহেবের স্ত্রী সহ পাটোয়ারী ও ভুঁইয়া সাহেবের স্ত্রী মায়াবীর সাথে সকল বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করলেও ছাদে না যাওয়ার বিষয়ে পুরোপুরি একমত ছিল। ইতোমধ্যেই মায়াবী তাদের বুঝাতে সক্ষম হয়েছিল ছাদে যেয়ে তাদের স্বামী নামক জন্তু দানবগুলো ফোন কলে পরকীয়া প্রেমে লিপ্ত থাকে ।

পূর্বেই বলেছি ভারতীয় সিরিয়াল এই সফলতার গর্বিত দাবিদার । হৃদয়ঘটিত বিষয়গুলো নিয়ে পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলে অধিকাংশ নারীরাই ১০০ তে ১০০ মার্কস পাবে বলে আলম সাহেবের বিশ্বাস।

নিজেকে সুস্থ প্রমান করার জন্য আলম সাহেব নিচের বসার রুমে এসেই সবুরকে এই প্রথম মাক্স পরা অবস্থায় আবিষ্কার করলেন সে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছে, হঠাৎ পাটোয়ারী সাহেব রুমে ঢুকেই আলম সাহেব কে দেখে চমকে উঠলেন সালাম বিনিময়ের তোয়াক্কা না করেই বলতে শুরু করলেন....

আপনি এখানে, আপনি না অসুস্থ?

"মায়াবী" ভাবীর কাছ থেকে সবকিছু জেনেছি । না না আলম ভাই এতবড় একটা মরণঘাতী রোগ নিয়ে আপনার এখানে বসা ঠিক হয়নি । উত্তরের অপেক্ষা না করে আপনমনে বলতে বলতে পাটোয়ারী সাহেব উপরে উঠে গেলেন । মায়াবী ভাবী স্বল্প সময়ে অতি নিপুণ কৌশলে তার গন্তব্যের দ্বারপ্রান্তে । বুঝতে আর আলম সাহেবের বাকি রইল না।

কষ্টে কুঁকড়ে গেলেন আলম সাহেব ।

হায়রে করোনা একটা অদৃশ্য অনুজীব সবকিছু এলোমেলো করতে বসেছে আদরের সন্তান তার মমতাময়ী মা"কে রাস্তায় ফেলে পালিয়েছে । মৃত্যুর কথা শুনার পরও বাবার কবরের পাশে কেউ যায়নি । প্রিয়তমা স্ত্রী স্বামীকে ফেলে সড়ে পড়েছে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে । এতদিন এগুলো খবরের কাগজে দেখেছেন আলম সাহেব অথচ আজ নিজের জীবনেই সেটা ঘটতে চলেছে । সুদীর্ঘ ২৫ বছরের মধুময় সস্পর্ক আজ হারাতে বসেছে বাড়িওয়ালার সাথে । শুধু একটা মিথ্যে অনুমানের ভিত্তিতে ..

সামাজিক দূরুত্ব কখন যে মনের দূরুত্ব বাড়িয়ে ফেলেছে আমরা জানি না । মনের অজান্তেই পরিবার থেকে আমরা কখন যে বিছিন্ন হয়ে পড়েছি সেটা উপলব্ধি করার অনূভুতিটুকুও আমাদের কাছে আজ অসহায় হয়ে পড়েছে,

পিতা তার সন্তানদের বুকে জড়িয়ে ধরে না, মা" জড়িয়ে ধরে আদর করে না তার সন্তানকে । সামাজিক দূরত্ব আজ শারীরিক দূরত্বে পরিনত করেছে । কোন এক অদৃশ্য অনুজীব এর ভয়ে আমরা আজ দিশেহারা....

আপনজনের শরীরের উত্তাপ নিতে সবাই ভূলে গেছে । এখন মানুষ সবচেয়ে বেশি ভয় পাই মানুষকে। তাহলে প্রেম, ভালবাসা, আবেগ, অনুভূতি, দায়িত্ব, কর্তব্যবোধ সবকিছুই কি নিঃশেষ হয়ে যাবে ?

এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আবারও অপেক্ষার প্রহর.....

চলবে.............

রিলেটেড নিউজ

আপডেট ০৯:৩৫ পিএম, ২০২২-০৯-১৯