আমরা ছবির কারণে ওদের হয়তো ঘৃণা করব কিন্তু আড়ালের ক্রীড়নক হাসছেন আর ভাবছেন খেলারাম খেলে যা। এরা তো পুতুল । সুতোর বাঁধন অনেক দূরে
এই ছবির প্রত্যেকে সেলিব্রেটিও হতে পারতো। চশমা পড়া ছেলেটা সালমান শাহ এর চেয়ে কম সুন্দর না। ওর ডান পাশেরটা,সালমানেরই বুদ্ধিমান বন্ধুটি ভাবুন। এরকম কেউ ফেরদৌস, কেউ বা রিয়াজ। এরা প্রত্যকেেই হতে পারতো কারো মনের নায়ক। শুধু হতে পারতো বলা যাবে না, হয়তো ওদের সবারই প্রিয়তমা আছে। যাকে সে ১০১ টি গোলাপ দিয়ে ভালোবাসার কথা বলতো। সেই অস্টাদশীও স্বপ্ন দেখতো ফুলের গন্ধ শুঁকে। আজ সকালে যখন তার স্বপ্নের নায়কের ছবিটি পত্রিকায় ও মিডিয়ায় এভাবে দেখছে সে কি ভাবছে বা আয়না ভাঙার
মত চুরমার হওয়া তার স্বপ্ন কি এক জীবনে আর জোড়া লাগবে? ছেলে জন্মের সংবাদে পাড়াপড়শি আত্মীয় পরিজনকে যে বাবা মা মিষ্টি মুখ করিয়েছিলেন আর মেয়ে হওয়াতে মুখ গোমড়া করেছিলেন, তাদের মুখটা একবার ভাবুন। কোথায় লুকাচ্ছেন ওরা আজ নিজেকে? সেই প্রিয়তমা বা বাবা মায়েরই অপরাধটা কি?
অপরাধ তাদের নয়। অপরাধ রাষ্ট্র ব্যবস্থার। যেখানে তারুণ্যের শক্তিকে অপব্যবহারের পথকে প্রশস্থ করে রেখেছে কিছু রাজনীতিক দুর্বৃত্ত। এই টগবগে তরুণগুলোর রক্তকে দূষিত করেছে, ওদেরকে ব্যবহার করে যারা ক্ষমতাধর হতে চায় তারা। আমরা ছবির কারণে ওদের হয়তো ঘৃণা করব কিন্তু আড়ালের ক্রীড়নক হাসছেন আর ভাবছেন খেলারাম খেলে যা। এরা তো পুতুল। সুতোর বাঁধন অনেক দূরে।
মহামারীর এই,কালে মানুষ প্রকৃতি থেকে শিক্ষা নিয়ে ভেবেছিল বদলাবে। আমুল বদলে মানবিক মূল্যবোধে মানুষ হবে। প্রতিদিন পত্রিকা দেখলে মনে হয় এক মহা উৎসব চলছে। জীবনের গল্প আছে রে বাকী অল্প। যা কিছু চাওয়ার নাও চেয়ে নাও। এনজয়,করার প্রতিযোগিতা চলছে। পুরুষ নামক কিছু দানবের হাতে নববধূ, কন্যা, বোন, মাতৃতুল্য কারোই রেহাই নাই।
সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়ে আমার মত অনেকেরই মাসে এনে মাসে খেতে প্রাণ ওষ্ঠাগত আর অস্টম শ্রেনি পাশ ড্রাইভার শত কোটি টাকার মালিক। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় দুই ভাই তিন হাজার কোটি টাকার মালিক। আর হয়তো আমার আপনার সন্তান পি এস.সি, জে.এস,সি, এস এস সি সহ সর্বোচ্চ ধাপ পেরিয়েও এখনো বাঁচার কোন পথ পাচ্ছে না বা পেলেও ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। এত অনিয়মেই যদি এত দ্রুত অর্থ প্রাপ্তি ঘটে তবে আর দীর্ঘ শিক্ষা পরিক্রমায় বা কেন? সৎ জীবন যাপনই কেন?
আদর্শ বিচ্যুত শুধুমাত্র ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির প্রশ্রয়ে আমাদের নতুন প্রজন্মকে দানবে পরিণত করছে। প্রতিটি এলাকায় গড়ে উঠেছে গ্যাং স্টার।মুরুব্বি হিসেবে এলাকার একজন বকাটে ছেলেকে বকা বা একটা থাপ্পড় দিন বুঝবেন কত তরুণ আপনাকে ঘিরে ফেলে। হুমায়ন আজাদের ভাষায় বলতে হয়.." ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই বাংলাদেশের প্রতিটি বর্গক্ষেত্রই অনিরাপদ এক ভূমি হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ"। ধর্ষণের এক উর্বর ক্ষেত্র জন্মভূমি। লুটপাট ও হালুয়া রুটির রাজনীতিতে জনতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কিছু ভন্ড রাজনীতিবিদ আপনার আমার সন্তানকে অমানুষ বানিয়ে আস্ফালন করছে আর গড়ছে বিত্ত বৈভবের পাহাড়। সব পাপই জায়েজ ঐ রাজনীতি নামক জালে।আর আমরা গেল গেল, সব বিপন্ন হলো ভেবে চিৎকার করছি শুধু। নীতি আদর্শের বুলিই আওড়াচ্ছি। চেতনার কথা,বলে দলকানা হয়ে প্রতিবাদহীন থাকছি। উন্নায়ন যাত্রায়,নিজের মন ও ইট সিমেন্ট সুরকি দিয়ে পরিপাটি করে প্রতিরোধ করে রাখছি। আর ভাবছি আমি তো নিরাপদ। আসলেই কি তা?
কেউ কি শুনছে জনতার আর্তনাদ?
খাগড়াছড়ির ঐ প্রতিবন্ধী নারী এবং সাভারে ভাইয়ের হাত থেকে কেড়ে নেওয়া নীলা,ও স্বামীর হাত থেকে প্রিয়তমা স্ত্রীকে তুলে নেওয়া সবই তো ৭১ এর পাকবাহিনীর মত নিষ্ঠুর নির্মমতার এক ২০২০ ভার্সন।
বিঃদ্রঃ একে একে সব অপরাধী ধরা পড়বে।সগর্বে অনেকে বলবে কেউ ছাড় পায় না। আবার যথারীতি নতুন নায়কের ছবি মুক্তি পাবে। সেই একই সুর, একই তাল।