২য় পর্বে আমরা জেনেছিলাম চিরচেনা ঘরে ফেরার সেই অসীম আগ্রহটা কেন জানি আলম সাহেব আজ হারিয়ে ফেলেছেন । তারপরেও সান্তনা সীমিত আকারে অফিসে যাবার নির্দেশনা রয়েছে । অভ্যাসগত কারণেই পরিবারের সদস্যদের পছন্দের খাবার কিনে আলম সাহেব ঘরে ফিরে ভাবলেন -
"ভালবাসার অনুভূতি বোঝার ক্ষমতা বিধাতা মনে হয় সকলকে দেননি।”
আবার
অনেকে ভালবাসা প্রকাশ করতেও জানে না ।যদিও ভালবাসার প্রকাশ ভঙ্গী একজনেরটা অন্য জনের সাথে মিলবে না ।
"মা তোমাকে ভালবাসি, তুমিই আমার পৃথিবী" প্রচন্ড ভালবাসার পরেও এই সহজ সত্যিটা আজও কোন সন্তান তার মা"কে বলতে পেরেছে কিনা জানা নেই । ভাবতে ভাবতে আলম সাহেব কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছিলেন ।
ভোরের আজানের সুমধুর ধ্বনিতে বিছানা ছেড়ে উঠতে উঠতে আলম সাহেবের ভাবনায় এলো আজকে অফিসে যেয়ে বস্কে বুঝিয়ে বলবেন অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ জমেছে বিধায় প্রতিদিন অফিসে আসার প্রয়োজন রয়েছে ।
ভাবনাটা মাথায় আসায় আলম সাহেব বুদ্ধির ঢেকুর গিললেন । নিজেই নিজের বুদ্ধির তারিফ করতে করতে নির্ধারিত সময়ের অনেক পূর্বেই অফিসে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন খন্দকার সাহেব ও রহমান সাহেব চুটিয়ে গল্প করছেন ।
আলম সাহেবকে দেখা মাত্রই এক গাল হাসি হেসে খন্দকার সাহেব বলতে শুরু করলেন-
আপনার কথায় বলছিলাম। এই বলে পিয়ন সবুজকে চা দিতে বললেন ।
চা খাওয়ার এক ফাঁকে অতি আত্নবিশ্বাসীর মতো খন্দকার সাহেব বলে উঠলেন-
আপনার কাজগুলো আমাকে বুঝিয়ে দিয়ে বস্ আপনাকে বাসায় বিশ্রাম নিতে বলেছেন । আলম সাহেব একটা প্রচন্ড ঝাঁকুনি খেলেন । হায়রে বাস্তবতা এইতো..... সেদিন...পরিবারের সাথে ছুটি কাটানোর ব্যকুলতায় দুচোখ ভিজে যেত অথচ এই মহামারীর চরম দুঃসময়ে অফিসে যাবার আকুলতা?
এ-ই দুটোর পার্থক্য ভুক্তভোগীরা নিশ্চয় বুঝবেন ।
"বন পোড়ে সবাই দেখে, অথচ মন পোড়ে কেউ দেখে না" । পরে অবশ্য আলম সাহেব রহমান সাহেবের কাছে জেনেছেন বসকে অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে খন্দকার সাহেব এ দায়িত্ব নিয়েছেন।
একই বিল্ডিংয়ে অবস্থানের কারণে ভুঁইয়া সাহেব ও পাটোয়ারী সাহেবের সাথে আলম সাহেবের ইতোমধ্যেই সখ্যতা গড়ে উঠেছে । পরিবারের উপেক্ষার গল্পগুলো অতি সন্তপর্ণে, নীচু গলায় ভাগাভাগি করে যে সময়গুলো কাটিয়েছে আবারো সেইভাবে কাটাবার ইচ্ছায় আলম সাহেব বাসায় ফিরলেন । নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই বাসায় ফেরাটা গার্ড সবুর কেন জানি ভালভাবে নিতে পারিনি, সন্দেহ....!
এখানে বলে রাখা দরকার করোনা ভাইরাসের শুরু থেকেই সবুর এটাকে একেবারেই পাত্তা দেয়নি । মাক্স পরাতো দূরে থাক, হাত ধোঁয়াটাও তার কাছে ঝামেলা মনে হতো । তার ধারণা যেহেতু সে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ টি বিড়ি খায়, সেহেতু "করোনা" আগুনের গা ঘেঁষতে সাহস পাবে না । এই বিশ্বাস তাকে পেয়ে বসেছে । ভাড়াটিয়ারা অনেকে সাবধান থাকার পরামর্শ দিয়েও সাড়া মেলেনি । সালাম, আদব লেহাজ এগুলো তার কাছে অর্থহীন । তবে বাড়ির মালিককে সে শুরু থেকেই সালাম দিয়ে আসছে । তার ভাষায় "মনিব বলে কথা ।
"যে কথা বলা হয়নি..... আলম সাহেবের স্ত্রী সবুরকে কিছু প্রয়োজনীয় ওষুধ ও স্যালাইন আনতে বলায় সন্দেহটা এবার প্রকট হলো । কেমন যেন একটা সুনসান নীরবতা আলম সাহেবকে ভাবিয়ে তুলেছে । নিজের স্বস্তি ফেরাবার জন্য প্রতিদিনের মতো গল্প করার জন্য ছাদে যেয়েও ফিরে আসতে হয়েছে । সকলে মোটামুটি নিশ্চিত করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে.........চলবে